একটি অফিসে অনেক মানষিকতার সহকর্মী থাকেন। তাদের কেউ কেউ ভাল আবার কেউ কেউ হযবরল টাইপের হয়। তাই কয়েকটি সহজ অথচ সুন্দর পদ্ধতি অনুসরন করে আপনি হয়ে উঠতে পারেন সকলের কাছে গ্রহনীয় একজন সহকর্মী। অফিসের সবার সাথে যদি ভাল সম্পর্ক থাকে তবে আপনি সেই অফিসে অনেক দিন টিকে থাকতে পারবেন। কোন সমস্যা হলেও আপনাকে সহায়তা করবে অন্য সবাই। এজন্যই অনেক দক্ষ ব্যক্তি কিছুতেই চান না নিজের অফিসের কোন একজন কলিগ বা সহকর্মী তাকে খারাপ জানুক।
আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, অফিসে সহকর্মীদের কারনেই আপনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঝামেলায় পড়তে পারেন। সে জন্য আপনি যে বিষয়গুলি অবশ্যই ফলো করবেন-
১। অফিসের প্রথম দিনঃ অফিসের প্রথম দিন হচ্ছে স্মরনীয় একটি দিন। এই দিন আপনি হয়তোবা সবার সাথেই পরিচিত হবার সুযোগ পেয়ে থাকবেন। আর যদি না পান তবে ধীরে ধীরে অফিসের যে যে ব্যক্তির সাথে আপনার কাজ করতে হবে তাদের সবার সাথেই হাসিমুখে পরিচয় করে নিন। ঠান্ডা নরম সুরে কথা বলুন, বুঝিয়ে দিন আপনি এই অফিসে কী কাজ করবেন, আপনাকে যেন সাহায্য করেন সে জন্য বিনীত অনুরোধ করুন। আন্তরিকতা দেখান, আপনি কাজ ভাল পারেন এটা একবারের জন্যও না বলে কাজে দুর্বল সেটাই বলুন। মনে রাখবেন যারা আপনার আগে এই অফিসে জয়েন করেছেন তাদের আপনার সিনিয়র হিসেবেই জানুন। দাম্ভিকতা পরিহার করে স্বাভাবিক আচরন শুরু করুন। এতে সবাই প্রথম দিনেই আপনার প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়বে। অফিসে সবার কাছেই গ্রহনীয় হতে গেলে প্রথম দিন একটি গুরুত্বপুর্ন হিসেবে সিলেক্ট করুন। ক্যারিয়ার জীবনে সফল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আরো যা যা করতে হয় তা নিম্নরূপ।
তবে ভুলেও এই দিন কারো সাথে বেশি হাসাহাসি করবেন না। প্রথম দিনেই কারো সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক করবেন না। সবাইকে আপন ভাবতে শুরু করবেন কিন্তু ভাই হিসেবে নয়, প্রতিবেশী হিসেবে। মার্জিত ভাষায় কথা বলতে না পারলে বেশি কথা বলবেন না। কথায় কথায় আগের অফিসের গল্প করবেন না।
২।ধাপে ধাপে সহকর্মীর মানষিকতা বুঝুনঃ একদিনে নয় একাধিক দিন অনুশীলন করুন, সত্যিই লোক হিসবে তিনি কেমন, মানুষ হিসেবে কেমন, কাজে কতটা দক্ষ কিংবা কতটা সাহায্যপ্রবন বা হেল্পফুল। মাথায় রাখবেন, সবাই একরকম নন। কেউ ধুম পায়ী কেউ অধুম-পায়ী। কেউ মিথ্যাবাদী কেউ সত্যবাধী, কেউ অসৎ কেউ সৎ। কেউ দক্ষ আবার কেউ অদক্ষ। কিন্তু তাই বলে কাউকে আপনি বাদ দিতে পারবেন না। সবাইকে আপনার লাগবে, এটাই ভাবুন। তাই যিনি যা চান তাকে তা করতে সহায়তা করুন। অফিসে সবার কাছে গ্রহনীয় হবার জন্য এটা করতেই হবে। আবশ্যক।
তবে সহায়তা না চাইলে করার দরকার নেই। অসৎ কাজে সহায়তা করার সময় সত্যিটা বলুন- আপনি সেই কাজটি পছন্দ করেন না। তবে কোন মারাত্মক ক্রিমিনাল কাজে জড়াবেন না। এসব ক্ষেত্রে যদি বুঝতে পারেন কারো চক্রে পড়ে যাচ্ছেন তবে কাজের অযুহাতে সরে পড়ুন। খারাপ মানুষের সাহচর্য দরকার নেই, কিন্তু যদি কাজ রিলেটেড হয়ে থাকেন তবে আপনি তার মন জয় করে ফেলুন। ভালোবাসুন , কিন্তু নিজে তার খারাপ কাজের সাক্ষী কিংবা সহকারী কোনটাই হবেন না ।
৩। প্রতিযোগীতাঃ অফিস আর স্কুল এই দুইটি জায়গার মধ্যে তেমন কোন তফাত নেই। স্কুলে যেমন সব বন্ধুকে হার মানিয়ে প্রথম হবার লক্ষ্য সবারই থাকে তেমনি অফিসেও থাকে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিযোগী/প্রতিযোগিনীর সংখ্যা একটু কম হয়। আর এই প্রতিযোগীতায় কখনোই চুপচাপ বসে থাকা ভাল নয়। কিন্তু এই প্রতিযোগীতা অন্য কেউ কিভাবে দেখছে সেটাও দেখুন। আপনার কাজ ছাড়া আর তেমন কোন কারনেই আপনি বসের কাছে প্রিয় হতে যাবেন না। এতে সবাই আপনাকে চামচা কিংবা খারাপ কিছু নামে অভিহিত করবে।
আর কে কিভাবে বসের কাছে ভাল এবং ট্যালেন্ট হিসেবে প্রমানিত হচ্ছে সেটাও দেখুন, কিন্তু কাজ ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে এগোবেন না। সমস্যা বাড়ে তখন যখন অযাচিত কেউ একজন উড়ে এসে জুড়ে যায়। আপনি যদি যোগ্য না হয়েও কোন পদ পেয়ে যান তবে আপনার কাছে যিনি যোগ্য তাকে সবার সামনে তুলে ধরে দ্বায়িত্ব না নেয়ার ঘোষনা দিন। এতে আপনি শুধু স্মরনীয় নন বড় হয়েই থাকবেন। এটা কিন্তু সাধারন কেউ পারেনা।
৪। অর্থনৈতিক সম্পর্কঃ এটা সকলেই একমত হবেন যে, অফিসের সহকর্মীর সাথে অবশ্যই অর্থনৈতিক কোন না কোন লেনদেনের সম্পর্ক হয়ে যায়। এর থেকে শুরু হয় খারাপ সম্পর্কের। অনেকের ভাল সম্পর্কের সুত্রটাও এখান থেকেই হয়। তবে সবচে’ ভাল যেটা তা হলো এই সম্পর্কের সাথে না জড়ানো। ক্ষতি নেই যদি আপনি সহনশীল হয়ে থাকেন। ধার দেবার জন্য মানষিকতা তৈরি করুন এমন ভাবে যে তিনি সেই টাকা ফেরত না দিলেও যেন আপনার কোন ক্ষতি না হয়। যেমন পাঁচশ অথবা এক হাজার… যার যার মত।
কিন্তু এটা কখনোই করবেন না, অতিরিক্ত পরিমান টাকা ধার দিয়ে বারবার ফেরত দিতে বলবেন না। তাতে সম্পর্ক নষ্ট হয়। শত্রুটা হয়।
৫। পারিবারিক ঘটনা নিয়ে আলাপঃ মজা করার অনেক কিছুই আছে। নিজের পরিবারের কথা নিয়ে এটা করবেন না। মজা করার ছলে কখনোই পারিবারিক বিষয়ে আলাপ করা আর আপনি একদিন আলোচনার বিষয়ে পরিনত হওয়া একই কথা। তাই বিরত থাকুন।
৬। নারী/পুরুষ সহকর্মীকে সহজভাবে নিনঃ নারীদের প্রতি দুর্বল থাকাটা দোষের হয় না। কিংবা পুরুষদের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়াটা মোটেই দোষ নয়। কিন্তু প্রকাশ করবেন না। মোটেও না। এটা আপনার অফিসে আপনাকে অনেক নিচে নামিয়ে দেয়। নারীকে নারী নয় কিংবা পুরূষকে পুরুষ না ভেবে কাজ করুন। সম্পর্ক একটাই হবে তাহল- সহকর্মী। এর বেশি কিছু করবেন না। আর যদি করেই ফেলেন তবে সেই অফিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে কেটে পড়ুন তারপর সম্পর্ক করুন। এতে দুজনের জন্যই মঙ্গল।
৭। অফিসে নিজের পরিবারের কাউকে নিয়োগ দিবেন নাঃ আমার একজন বস এটা বুঝিয়েছেন, অফিসে যদি নিজের বোন কিংবা স্ত্রী অথবা ছোট ভাই কিংবা শ্যালক কে চাকুরতে নিয়োগ করান তবে সেটা দু’জনের জন্য খারাপ এবং হুমকি সরূপ। অন্য সহর্মীরা এটা মেনে নিতে চান না। তাই আপনার ফ্যান তৈরি না হয়ে নিন্দুক তৈরী হবে। সহকর্মীদের সাথে ভাল থাকার জন্য আপনার দুর্বলতম কোন জায়গা থাকা কোন মতেই ঠিক নয়।
৮। প্রিয় কিংবা অপ্রিয় লিস্ট প্রকাশঃ অনেকেই বলেন, আমি অমুকের ফ্যান, ওটা ভাল লাগে, ওটা ভাল লাগে না এসব। এই লিস্ট প্রিয় মানুষের সাথে শেয়ার করুন। সহকর্মীর সাথে নয়। অফিসে সবার কাছে গ্রহনীয় একজন সহকর্মী হতে গেলে এই কাজ থেকে বিরত থাকাই ভাল।
৯। কারো ভুল নিয়ে সমালোচনাঃ ভুল করা মানুষের অভ্যাস। কারো ভুল ধরা পড়ে গেলে সেটা নিয়ে সমালোচনা না করে গোপনে তাকে জানিয়ে দিন। অন্য কারো কাছে নিজের সহকর্মীকে হেয় প্রতিপন্ন করবেন না। এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বস্ত হবার সুযোগ পাবেন। এটাকে কাজে লাগান। কিন্তু ক্ষতি করতে গিয়ে সকলের চোখে খারাপ হয়ে যাবেন না।
১০। বিতর্কঃ বিতর্ক করবেন কিন্তু সবার সাথে নয়। যিনি হজম করতে পারেন না তাকে পাশ কাটিয়ে যান। না করতে পারলে ভাল হয়।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলো কারো কাছে গ্রহনীয় নয় যেমন রাজনীতি নিয়ে বাড়াবাড়ি অথবা মতের আধিক্য, কথা কাটাকাটি। বর্জন করুন কু-অভ্যাস। নিজেকে করুন স্মরনীয় একজন সহকর্মী। অফিসে সবার কাছে গ্রহনীয় একজন সহকর্মী হয়ে যান । আর দেখুন কেমন লাগে আপনার পরবর্তী জীবন।
Comments
Post a Comment
Waiting for your replied